আজ শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আকিজ পরিবারের বিরুদ্ধে নিযার্তিত পুত্রবধূর নানা অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন পরিবারটির এক পুত্রবধূ। এই অভিযোগে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তিনি। এরপর তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন শাশুড়ি।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা হলেন, শেখ আকিজ উদ্দিনের মেজো ছেলে শেখ মমিন উদ্দিন, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা ও তাদের ছেলে ফাহিম। ফাহিমের স্ত্রীই তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন।

সাধারণ ডায়েরি ও শাশুড়ির করা মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব পড়ে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌকিরের ওপর। তিনি বলেন, ওই নারীর শাশুড়ি আঞ্জুমান আরার করা মামলার তদন্ত চলছে। এসময় ফাহিমের স্ত্রীর করা সাধারন ডায়েরির তদন্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এসআই তৌকির বলেন, ‘ওই নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন জানিয়ে জিডি করেন। ওই জিডির তদন্তভার আমার ওপর পড়ে।’

জিডির তদন্তে কী পাওয়া গিয়েছিল জানতে চাইলে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে আর কোনো মন্তব্য না করে টেলিফোন কেটে দেন তিনি।

ফাহিমের স্ত্রীর অভিযোগ, শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামী তাকে মারধর করেছেন, শাশুড়ি গৃহসহকর্মীদের সহায়তায় তাকে নির্যাতন করেছেন ও তার নামে টাকা চুরির মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এই মামলায় আড়াই বছরের সন্তানসহ কারাবাসও করতে হয়েছে বলে তিনি জানান।

তবে মারধর ও টাকা চুরির অভিযোগে মামলার কথা অস্বীকার করেছেন ওই নারীর শাশুড়ি আঞ্জুমান আরা। মামলায় যাকে সাক্ষী করা হয়েছে সেই গৃহকর্মী জুলেখাও মামলায় আনা অভিযোগের বিষয়গুলো মিথ্যা বলে জানিয়েছেন।

ফাহিমের স্ত্রী বলেন, ‘ফাহিম প্রায়ই আমাকে মারধর করে। আর সেটা সহ্য করতে না পেরে গতবছরের অক্টোবরের ১১ তারিখ আমি ঘুমের ট্যাবলেট খাই। এরপর সেইদিন রাতে আমার শাশুড়ি আঞ্জুমান আরা আমার নিকেতনের বাসায় এসে রাত ৯টার দিকে আমাকে তার ধানমন্ডির বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু তারা আমাকে কোনো চিকিৎসা করাননি। আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। এরপর ১৩ তারিখ বিকেল থেকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকেন শাশুড়ি। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর শ্বশুরের সঙ্গেও আমার কথা কাটাকাটি হয়। তখন তিনি আমার বাবা-মাকে নিয়ে গালিগালাজ করেন। এরপর আমার শাশুড়ি ও বাসার তিন কাজের লোক হায়দার, রেজা ও জুলেখা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। আর সেই রাতেই ড্রাইভারকে দিয়ে আমাকে নিকেতনের বাসায় পাঠানো হয়। তখন আমি সেই রাতেই ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। এরপর ১৪ তারিখ আমি ধানমন্ডি থানায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৭২৪) করি। আর এর তদন্তের দায়িত্ব পড়ে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক তৌকিরের ওপর। কিন্তু তিনি কোনো তদন্ত করেননি।’

সাধারণ ডায়েরি করার দুইদিন পর ১৭ অক্টোবর ওই থানায় তার শাশুড়িও একটি মামলা করেন এবং সেটিতে আসামি করা হয় ফাহিমের স্ত্রী ও স্ত্রীর মাকে।

আঞ্জুমান আরার করা ওই মামলায় বলা হয়েছে, ‘২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি আমার ছেলে ফাহিমের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়। এরপর তারা বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকতো। গত ১৩ অক্টোবর (২০১৮) রাত সাড়ে ৮টায় আমার ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে ফাহিমের স্ত্রী অশ্লীল গালিগালাজ করে, কাজের মহিলা জুলেখাকে মারধর করে। ঐ সময় বাসায় থাকা অন্য কাজের লোকদের সঙ্গে নিয়ে আমি জুলেখাকে বাঁচাতে যাই। তখন আমাকে হত্যা করার জন্য সে (ফাহিমের স্ত্রী) রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে হত্যার হুমকি দেখায়। এছাড়া, বাসায় সবাইকে অবরুদ্ধ করে বাসার মালামাল ভাঙচুর এবং আমার ব্যাগ থেকে ১৫ হাজার টাকা চুরি করে।’

ফাহিমের স্ত্রী হত্যার ভয় দেখিয়ে ও শিশু সন্তানকে হত্যা করে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক সুনাম ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি তিনি বাসার ৩ লাখ টাকার আসবাবপত্রের ক্ষতি করেছেন, গাড়ি ভাংচুর করে এক লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন এবং ১৫ হাজার টাকা চুরি করেছেন বলেও মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে।

এদিকে মামলার বিষয়ে মামলার বাদি আঞ্জুমান আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ছেলে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করছে। আমরা কখনো বাধা দেইনি। ওরা যেন সুখে থাকে সেজন্য সাধ্যমতো সাপোর্ট দিয়েছি। আকিজ পরিবার তাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে না নিলেও আমি মেনে নিয়েছি। চেয়েছি ওরা সুখে থাকুক।’

মামলায় উল্লেখ করা ১৫ হাজার টাকা চুরি ও গাড়ি ভাংচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘কে চুরি করেছে? আমি জানি না। গাড়ি ভাংচুরের বিষয়েও জানি না। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার স্বামীর নির্দেশে সব কিছু হয়েছে। তাই কিছু জানার থাকলে আমার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

এ বিষয়ে জানতে আকিজ পরিবারের মেজো ছেলে শেখ মমিন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার বড় ভাই শেখ মহিউদ্দিন মামলা করিয়েছেন।’

আপনার পুত্রবধূর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মামলা করা হলো অথচ আপনি কিছুই জানেন না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনার কিছু জানার থাকলে ভাইকে ফোন দেন।’

এরপর শেখ মহিউদ্দীনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিরি ফোনটি রিসিভ করেননি।

মামলায় প্রথম সাক্ষী করা হয়েছে গৃহসহকর্মী জুলেখা বেগমকে। তিনি বলেন, ‘ফাহিমের স্ত্রীকে অসুস্থ অবস্থায় ১১ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডির বাসায় আনেন আঞ্জুমান আরা। এরপর ১২ তারিখ সারাদিনও অসুস্থ ছিলেন তিনি। ১৩ তারিখ দুপুরেও একসাথে সবাই খাবার খাই। কিন্তু হঠাৎ কোনো একটি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে রাতে ঝগড়া হয়। তবে মেরে ফেলা, গায়ে আগুন ধরানো বা হুমকির মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’

শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতিনিয়ত তার জামিন বাতিল করানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ফাহিমের স্ত্রী বলেন, এসব হুমকির কারণে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছেন তিনি। এরপর থেকে তার স্বামী ও শ্বশুর প্রতিনিয়ত ফোনে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তার।